আমি পিয়ালী দে বিশ্বাস

কলমে কৌতুহল আর কড়চা লেখার ইচ্ছে নিয়ে সাংবাদিকতা শুরু। পেশার প্রয়োজনেই শিক্ষা পেরিয়ে স্বাস্থ্যের অঙ্গনে। ক্রমশ পাল্টে যাওয়া সময়ের নোনা হাওয়ায় কলম বস্তুবাদী হল বটে, কিন্তু কাজের আরাম হল না। অতঃপর খোঁজ জারি রইলো। নেই রাজ্যের পালাবদলের সাক্ষী এই কলম সত্যকে খুঁজে পেল এক জন বৈদ্যের স্টেথোসকোপে। নতুন দৃষ্টিপাতে বদলে গেলো পথ। জনপদ ছেড়ে কাজের পরিধির বাঁক নিল বস্তি জীবনের গলি পথে। ঝাঁ চকচকে খোলস ভেঙে শহরের জনস্বাস্থ্যের কদর্য চেহারায় নিজের কাজের ক্ষেত্র খুঁজে পেলাম। কিন্তু সত্য তো বারবার ক্রমোন্নতির পথ ধরে এগিয়ে চলে। সেই ধারাবাহিকতায়, "জনস্বাস্থ্য কথা" এই মাধ্যমটি, সত্যকে খোঁজার একটা নতুন যাত্রা।

কলকাতার জলে বিষ। সেই জল নিঃশব্দ ঘাতক হয়ে বইছে শহরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বিশেষ একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে দূষণ ও খারাপ প্রয়-প্রণালীর জেরে শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ পানীয় জল আর সুরক্ষিত নেই। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জলে মিশে রয়েছে মাইক্রো ফাইবার, যা সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের অনু। মাইক্রো ফাইবারের অস্তিত্ব থাকলে তা থেকে ডায়রিয়া, আমাশা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বি ও পোলিওর মত জল বাহিত রোগের সংক্রমণ হতে পারে। হতে পারে যে কোন ধরনের কৃমি সংক্রমণও। আমরা জানি এখনো প্রতি বছর ডায়রিয়া সংক্রমণে পাঁচ বছরের নিচে ৩৯ লক্ষের-ও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। অনিয়ন্ত্রিত পুঁজি, একতরফা অর্থনীতি, বেড়ে চলা নগরায়ন ও মানুষের লোভ আর এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য রাখছে না।

01


04

আগস্টের প্রথম থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত "বিশ্ব ব্রেস্ট ফিডিং সপ্তাহ"। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ছ'মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। মায়ের দুধ থেকেই শিশু সব রকমের পুষ্টি পায়। এই সময়, বাইরের কোন খাবার তার প্রয়োজন নেই। শিশুর পেট ভরছে না, এই ভেবে শিশুকে বাইরের খাবার দেওয়া হলে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যা হতে পারে। জন্মের পরেই মায়ের স্তন-বৃন্তে শিশুর মুখ ধরতে হবে, দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের ও বাচ্চার শরীরের সঠিক অবস্থানও খুব প্রয়োজনীয়। শিশুর নিচের দিকের থুতনি মায়ের স্তনের সঙ্গে লেগে থাকবে, আর ওপরের ঠোঁটটি উল্টানো অবস্থায় থাকবে। সঠিক পদ্ধতিতে শিশুকে ধরলে শিশু নিজের থেকেই দুধ টেনে খাওয়ার চেষ্টা করবে। বুকের দুধ খাওয়ার মাধ্যমে মা আর শিশুর মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠবে।

02


04

গর্ভাবস্থায় ন'টি বিপদ সংকেত থাকলে গর্ভবতীকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ন্যাশনাল স্যাম্পেল রেজিস্ট্রেশন-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০-তে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে আমাদের দেশে প্রতি লাখে ৯৭ -১০০ জন মহিলার মৃত্যু হয়। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত, তলপেটে যন্ত্রণা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা যন্ত্রণা, ঘনঘন জ্বর আসা, সময়ের আগে জল ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে প্রসূতির ও নবজাতকের জীবনের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এই কারণেই গর্ভবতী মেয়ে বা মহিলাদের যত্ন নিয়ে কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে মিটিং করা হয় আমাদের পক্ষ থেকে।

03


04

স্বাস্থ্যসূচকের নিরিখে এ রাজ্যের মধ্যে মহেশতলা মিউনিসিপালিটির বেশ কয়েকটি এলাকা পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের রুটিনাইজেশন ও অপুষ্টি জনিত বেশ কিছু রোগের সমস্যা রয়েছে এলাকায়। এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের চিকিৎসকদের দিয়ে বিশেষ ক্যাম্প করানো হচ্ছে।

04


04

ব্যক্তিগত তথ্য

পড়াশোনা :-

বাবার চাকরি সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছি। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকে ছ'টি স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ হয়েছে। শেষে বারাসাত গভর্মেন্ট কলেজে বাংলায় স্নাতক হয়েছি (২০০৭)। স্নাতকোত্তর (বাংলা) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০০৯)। এরপর জর্জ টেলিগ্রাফ থেকে সাংবাদিকতা, পাবলিক রিলেশনস ও মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা (২০১০)। তবে এক জীবনে কি আর শেখা শেষ হয়! এখন আমার শেখার জগত আমার ফিল্ড - জনস্বাস্থ্য।
শৈশব থেকে কৈশোর কেটেছে উত্তর ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে। একদিকে ইছামতি অন্যদিকে কাঁসাই নদীর পাড়ে। মানুষ হিসেবে যা শেখা তা তো নদী আর প্রকৃতির কাছেই।
পেশাগত অভিজ্ঞতা

সাংবাদিকতা :-

২০০৯ থেকে সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। এর আগেও নানা ধরণের কাজ করেছি। পেশার শুরুতে প্রথমে অডিও ভিজুয়াল ও পরে প্রিন্ট মিডিয়াতে চাকরি। এন.ই. বাংলার প্রোডাকশন হাউজ থেকে 'কলম পত্রিকা'-র জার্নিটা মসৃণ ছিল না। কিন্তু দারুণ উপভোগ্য ছিল।
সাধারণ মানুষের সমস্যাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায় আমার সাংবাদিকতার জীবনে। অনেক বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাকে বর্ণনা করতে শিখি। মানুষকে বুঝতে শিখি।
চলার পথ বদলে যায় ২০১৯ থেকে। শুরু থেকে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হলেও এইসময়ে ঘটা কিছু ঘটনা ও মানুষের সংস্পর্শে এসে আক্ষরিক অর্থেই রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ হয়। এই সময়পর্ব থেকেই মেইনস্ট্রীম মিডিয়ার কাজ ছেড়ে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি। আসলে স্বাস্থ্য বীটের সাংবাদিকতা করতে গিয়েই জনস্বাস্থ্যর বিষয়ে আগ্রহ জন্মায়। কোভিড পিরিয়ডের সময় থেকে #UNICEF - এর নানা প্রজেক্টে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করি।

জনস্বাস্থ্যের কাজ :-

জনস্বাস্থ্যের বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটা আমাদের দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এই বিষয়টাকে খুব কম জনই গুরুত্ব দেয়। অথচ জনস্বাস্থ্যের ছোট ছোট মাপকাঠি পূরণের মধ্যে দিয়েই আমরা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারি। তাই, জনস্বাস্থ্যের কাজটা সক্রিয়ভাবে করে যাওয়ার চেষ্টা করি।